দেখ না মন ঝাকমারী এই দুনিয়াদারী।
পরিয়ে কপনি ধ্বজা, কী মজা উড়ালো ফকিরি!!
বড় আশার বাসা এ ঘর,
পড়ে রবে কোথা রে কার
ঠিক নাই তারি,
পিছে পিছে ঘুরছে শমন
কোনদিন হাতে দেবে দড়ি।
বড় দরদের ভাই-বন্ধুজনা
মলে সঙ্গে কেউ যাবে না
মন তোমারই,
খালি হাতে একা পথে
বিদায় করে দেবে তোরি।।
যা করো তাই করো রে মন
পিছের কথা রেখো স্মরণ
বরাবরই,
দরবেশ সিরাজ সাঁই কয় শোন রে লালন
হোস নে কারো ইন্তেজারী।।
উপরোক্ত লালনের গানটি দ্বারা তিনি ফকিরিত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান করেছিলেন। এগান ছাড়া আরও অনেক গান আছে যেমন, "কে তোমারে এই বেশ-ভূষণ পরাইলো গো শুনি", "কপাট মারো কামের ঘরে", "জ্যান্তে মরার প্রেম সাধন কী পারবি তোরা" ইত্যাদি। ফকিরি একেশ্বরবাদের মতধারা। ঈশ্বর-নাম নিয়ে আমরা জগতে যে জটিলতা দেখতে পাই, তিনি তাঁর উদার একেশ্বরবাব ধারণাটির সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়েছেন, ঈশ্বর ধারণা বা বিশ্বাসকে একটি পাত্রে এনে বসিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর, গড, সাঁই যে, যে নামেই ডাকুক না কেনো, আত্মজ্ঞে এক ঈশ্বর ব্রত পালনকারীই সঠিক পথধারায় আবর্তমান। অর্থাৎ ঈশ্বর প্রদত্ত করণই মূখ্য, তাঁর নাম গৌণ। এ বিষয় নিয়ে তিনি বহু গান রচনা করেছিলেন, তার মধ্যে একটি গানের কয়েকটি পঙক্তি এখানে উল্লেখ করছি।
গুড় বললে কি মিষ্টি হয়?
দীপ না জ্বালালে কি আঁধার যায়?
অমনি জানো হরি বলাই
হরি কী পাবে?!
অর্থাৎ, হরির করণ যদি না থাকে তোমার ব্রতে, শুধু হরি নাম জপলে কি হরিকে পাবে? ঠিক যেমন, ঘুষ নেবো, দুর্নীতি করবো, অপহরণ করবো, অত্যাচার করবো, আর শুধু আল্লাহর নাম ডেকেই কি মুসলিম হয়ে যাবো? অর্থাৎ, আল্লাহ বা হরি নামে ঈশ্বরকে ডেকে কোনো লাভ নেই।
ঐ গানের শেষ অন্তরায় আবার তিনি বলছেন,
গুরু চিনে খোদাকে মানো
সাঁইর আইন আমলে আনো
লালন বলে তবে মন
সাঁই তোরে নিবে।।
অর্থাৎ ঈশ্বর নাম গৌণ, কিন্তু তাঁর প্রদত্ত আদেশ পালন করা এবং নিষেধ পরিহার করে চলাই হলো মূখ্য। যে এই দর্শন মার্গে চলতে পারবে, তাকেই কেবল ঈশ্বর কাছে টেনে নেবে।
লালন প্রদত্ত ফকিরির জীবনাদর্শন, সম্পূর্ণরূপে লালন প্রদত্ত একটি মতবাদ এবং এই মতবাদ সম্পূর্ণ লালনের স্বতন্ত্র পথ-প্রদর্শিত মতধারা। তিনি ছিলেন এই মতধারার পথ-প্রদর্শক। তবে ঈশ্বর প্রদত্ত মতবাদে তাঁর প্রতি প্রবর্তিত বাণীতে তাঁর পূর্ববর্তী কোন পথ-প্রদর্শক বা সংবাদদাতাগণকে তিনি অস্বীকার করেন নি। বরং তাঁর পূর্বক্তো পথ-প্রদর্শকদের অনুসারীদের অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিপথগামীতা দেখে তিনি বহু কটাক্ষমূলক গান রচনা করেছিলেন। যেমন আল্লাহও তাঁর পথ-প্রদর্শক গুণী মুহাম্মাদের মাধ্যমে পবিত্র কোরানেও গুণী মুহাম্মাদের পূর্ববর্তী আল্লাহর পথ-প্রদর্শগণের ও সংবাদদাতাগণের অনুসারীদের অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিপথগামীতা দেখে কটাক্ষ করে বহু আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
লালন নির্বাণ লাভে তাঁর ফকিরি মতাদর্শন গ্রহণের জন্য আহ্বান করে এই গানটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু ফকিরি ও বাউলকে অনেকে এক করে দেখাতে চান। কিন্তু ফকিরি ও বাউল যে এক নয় তা তারা বোঝে না। বাংলায় বাউল শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে সংস্কৃত বাতূল বা বাতুল শব্দ থেকে। বাত+ঊল বা উল। বাত শব্দের অর্থ বায়ু এবং ঊল বা উল শব্দের অর্থ ললনের মতে সাধক। অর্থাৎ বায়ুর সাধক। তবে এখানে বাতুল শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বায়ুরোগগ্রস্থ রুগী বা উন্মাদ বা পাগল। আসলে ঈশ্বর সাধকেরা এক ধরণের উন্মাদ বা পাগলই বটে। তাই তিনি তাঁর এক গানে বলেছেন, "পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে।" অর্থাৎ তিনি ঈশ্বরকে শ্রেষ্ঠ পাগল বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ঈশ্বরের পাগলামী লীলার উদ্দেশ্য বুঝতে হলে, পাগল না হলে ঈশ্বর সম্বন্ধনীয় সাধন করা সংসার জগতের মানুষ দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্যই এরা গৃহত্যাগী। এই গৃহত্যাগ থেকেই বাউল শব্দটি এসেছে, যারা বায়ু সাধনে দীক্ষা গ্রহণে অংশ নেয়, লালন মতাদর্শে তাদেরকে বাউল বলা হয়। কিন্তু ফকিরিতে বাউল অনেক নিম্ন স্তরের অবস্থান। কারণ লালন ফকিরি অর্জনকে মোট পাঁচটি স্তরে বিভক্ত করেছিলেন। ১) আউল, ২) বাউল, ৩) দরবেশ, ৪) সাঁই ও ৫) ফকিরি। অর্থাৎ ফকিরি পদ লাভের তিন স্তর পূর্বের পদ হচ্ছে বাউল। অর্থাৎ ফকিরি সম্প্রদায়কে যারা বউল সম্প্রদায় বলে পরিচিতি দান করে, তারা এই সম্প্রদায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। সমাজে বাউল নামে অনেক সম্প্রদায় আছে। যেমন চৈতন্যদেবের অনুসারী বৈষ্ণব সম্প্রদায়। এদের মধ্যে যারা রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে বাঁধা গানে সুর করে ভিক্ষা করে বেড়ায় এদেরকে বাউল বলা হয়। এছাড়া অনেক ভিক্ষুক আছে যারা লালনের গান, বিবি ফাতেমার উপর রচিত গান, কিছু আউলিয়াদের উপর রচিত গান এবং গুণী মুহাম্মদকে নিয়ে রচিত গান গেয়ে ভিক্ষা করে বেড়ায়, তাদেরকেও আমরা বাউল বলি। অর্থাৎ বাউল বিশেষণটাকে আমরা এতো সরলীকরণ করে ফেলেছি, সাদা পোষাকে, কমলা, কালো, লাল বা জাফরান রং এর পোষাক পরিহীত কোন মানুষের হাতে একতারা বা দোতারা দেখলেই আমরা তাকে বাউল বলে থাকি। যা আমাদের জানার ভুল বা অজ্ঞতা। এমন অজ্ঞতা বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়। যেমন আমরা মনে করে থাকি জন্মগত ও সম্পর্ক সূত্রে মুসলিম হওয়া যায়। যা সম্পূর্ণরূপে একটি ভ্রান্ত ধারণা। কোরানেই এর প্রমান রয়েছে, মুসলিম হয়ে কেউ জন্মায় না, মুসলিম হতে হয়।
এখন আসি আউল বাউল দরবেশ সাঁই ও ফকিরি নিয়ে আলোচনায়। আউল শব্দের অর্থ হলো এলোমেলো। যারা সংসার জগতে বাবা মা ভাই বোন স্ত্রী স্বামী পুত্র সন্তান আত্মীয় স্বজনদের এবং সমাজের নেতৃত্ব স্থানীয় বিশিষ্টজনদের অন্যায় অনাচার কপটতা ইত্যাদি দর্শনে নিজ বিবেক দংশনে বিভ্রান্ত হয়ে সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে সকলের বৈষম্য মানিয়ে নিতে না পেরে গৃহ ত্যাগী হয়, এদেরকে লালন মতাধারায় আউল বলা হয়। লালনের দৃষ্টিতে সমাজের বাকি সকল মানুষ হলো, বদ্ধজীব অর্থাৎ পশুর আত্মা বিশিষ্ট আকারে মানুষ মাত্র।
এই আউলের অধিকাংশকেই বদ্ধজীব মানুষগুলো পাগল বলে আখ্যায়িত করে। কারণ সমাজে অন্যায়কারী এবং অন্যায়কারীর নিকট থেকে সুবিধা প্রাপ্তির লোভে অন্যায়কারীর অন্যায়ের দাসত্বকে গ্রহণ করে সুবিধাভোগীরা, স্পষ্ট ও সত্যভাষীদের কথায় বিব্রত হয়ে সকলে ঐসব সত্যবাদীকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে। এটা সমকালীন ঘটনা নয়, বহু পূর্ব থেকে স্পষ্ট সত্যবাদীদেরকে অন্যায়কে লালনকারী সমাজ পাগল বলেই আখ্যায়িত করে আসছে। যেমন গুণী মুহাম্মাদকেও পাগল বলে আখ্যায়িত করেছিলো তৎকালীন সময়ের অন্যায় ও অত্যাচারী মানুষগুলো, যা কোরানে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। এই অন্যায় অত্যাচার অনিয়মের সমাজ থেকে বেরিয়ে আসা মানুষগুলোকেই আউল বলে। সামাজিকভাবে এই আউলদের সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায় এদের কাউকে পাগলা গারদে পাঠানো হয়, কেউ পথভ্রষ্ট হয়ে সমাজের উচ্ছিষ্টে পরিণত হয়। কদাচিৎ যদি কোন আউল কোন ফকিরের সঙ্গ লাভ করতে পারে তাহলে বায়ু সাধনের দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বাউল স্তরে উত্তির্ণ হয়ে তার বায়ুগ্রস্ততা অবস্থান থেকে প্রথমে মুক্তি লাভ করে। এরপর সে কোন সৎ পথে কর্ম গ্রহনের দীক্ষা লাভ করে সুস্থ জীবন যাপন করে। এরাই হলো সত্য ও প্রকৃত বাউল।
এখানে উল্লেখ্য যে, লালন নিজে কখনও ভিক্ষা করতেন না এবং কাউকে ভিক্ষাবৃত্তিক দর্শন দান করেন নি। তিনি কর্মঠ মানষ ছিলেন এবং মানুষকেও সৎ কর্ম করবার দর্শন দান করেছেন। তার গানেই স্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়, "সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন, সত্য সুপথ না চিনিলে পাবি নে মানুষের দরশন।"
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন বিকৃতি ঘটেছে অর্থাৎ ঘুষখোর, সুদখোর, হত্যাকারী, অত্যাচারী, অনাচারী বেশ্যা রমণকারী সকলেই আমরা মুসলমান বলে থাকি। এক কথায় অন্যায়ভোগকারী মুসলমান। ঠিক তেমনি ফকিরি সম্প্রদায়ের মধ্যেও এমন নিকৃষ্ট ফকির আছে যারা ষড়রিপুর বশে অনেক অনাচারকে এই সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ত করে ফকিরি সম্প্রদায়কে কলুষিত করেছে। অথচ ফকিররা ষড়রিপু দমনকারী সকল ভোগবিলাসের উর্ধ্বে। ষড়রিপু দমন সম্পর্কে লালন বহু গান রচনা করেছেন। ফলে ফকিরি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনরূপ অনাচার থাকতে পারে, এটা কখনও বিশ্বাসযোগ্য নয়। অনাচারী সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকে। বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যেও এরূপ সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সুবিধা ভোগের জন্য গড়ে উঠেছে। তবে প্রকৃত অর্থে লালন অনুসারী ফকির যারা, সেই ফকিরি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন অনাচারী নেই। কারণ লালন সমাজের অনাচার দেখে ঐসব অনাচারীকে কটাক্ষ করে বহু গান রচনা করেছেন। অতএব ষড়রিপুর সাথে বসবাস করে কেউ ফকির হতে পারে না। এদেরকে বলেছে ফিকিরবাজ। ফকির ও ফিকিরবাজের পার্থক্য নির্ণয় করতে না জানলে আসল ফকিরের দর্শন লাভ অতিকঠিন। কারণ ফকিরি সাধন অনেক ধৈর্যের এবং অনেক ত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। যেমন বাউলের বায়ু সাধনের পরের যে স্তর তা হলো দরবেশ। বায়ু সাধনের মাধ্যমে যারা আত্মসংযমী আদর্শ মানবে পরিণত হতে পারে তারাই দরবেশ স্তরে উত্তীর্ণ হতে পারে। আত্মসংযমের উচ্চ মার্গে যারা আপ্ততত্ত্ব জ্ঞানে দীক্ষীত হয়ে সাঁইয়ের স্বরূপ দর্শনে সামর্থ লাভ করতে পারে তাকে সাঁই বলে এবং সাঁইয়ের কৃপায় যিনি সাঁইয়ের দিক নির্দেশনা দানে পতিতের পথ-প্রদর্শকের মর্যদা লাভ করেন তিনিই ফকির। তখনই কপনি ধ্বজা মজা উড়ানো সম্ভব। এই মজা লাভ করতে হলে কারো প্রতিক্ষায় বা ইন্তেজার করলে চলবে না। এ মজা নিতে হলে নিজের মনকে সাথে নিয়ে চলতে হবে এবং মনের সকল কু-প্রবৃত্তিকে দূর করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। কারণ তোমার পাপের বোঝা তোমার নিজের। আজরাইল পিছনে পিছনে ঘুরছে, মৃত্যুর আগেই পরিশুদ্ধ হতে পারলেই পরকালে উদ্ধার পাবে। কারণ যে পরিবার পরিজনের জন্য তোমরা পাপ কার্য করছো তারা কেউ তোমাকে পরকালে উদ্ধারে আসবে না এবং তুমি মরে গেলে তোমার সঙ্গে কেউ যাবে না। যদি ভোগ বিলাসের পাপাচার থেকে মুক্তি লাভ করতে চাও তাহলে ঐ জগতের সকল পাপীর সঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই মনের আঙ্গিনায় সফেদ রঙের কপনি ধ্বজা উড়ানো সম্ভব হবে।
নিজের কেবিনে বসে আছে লিও। গালে হাত রেখে বাইরের অনন্ত বিস্তর মহাকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার সুইভেল চেয়ারটা আলতো করে এদিক ওদিক ঘুরাচ্ছে আর গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। মন বলছে কোথাও একটা ঘাপলা আছে। এই মিশনটা যেন হঠাৎ করেই দেয়া হল তাকে। আর তৃতীয় মাত্রার সংকেত পাওয়া একটা ঘটনা বিজ্ঞান পরিষদ কিভাবে এতটা সহজভাবে দেখছে তা বোধগম্য হল না তার। সে আশা করেছিল আরো অবিজ্ঞতাসম্পন্ন, দক্ষ দলনেতাকেই এই মিশনে দায়িত্ব দেবে তারা।
ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল সে। হয়তো তারা ভেবেছে এটা ফলস সিগনাল ছাড়া কিছু না।
চেয়ার থেকে উঠে গ্লাসের বিশাল উইন্ডো স্কীনের সামনে দাড়ালো লিও। এখান থেকে পুরো মহাকাশটাই যেন দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র পাতলা একটা ট্রান্সপারেন্ট আবরণ… আর তার পরেই রয়েছে অসীম শুন্যতা…
ট্রিনিটি… শুনতে পাচ্ছো? মৃদু স্বরে বলল সে।
অবশ্যই মহামান্য লিও। একই ভঙ্গিতে স্পীকার থেকে ভেসে এল ট্রিনিটির গলা।
তৃতীয় মাত্রার সংকেত অনেক বড় একটা ব্যপার তাই না?
জ্বী মহামান্য লিও। মানবজাতির ধ্বংসের সম্মুখিন হলে এই মাত্রার সংকেত দেওয়া হয়।
তাহলে আমাকে কেন পাঠানো হল? মানব জাতির অন্তরায়ের মুহুর্তে বিজ্ঞান একাডেমি কি আরো বিচক্ষণ লোককে খুজে পায় নি?
এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই মহামান্য লিও। আপনার দক্ষতার উপর বিজ্ঞান একাডেমির যথেষ্ঠ আস্থা রয়েছে। নাহলে এই মিশনে অন্য কাউকেই তারা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করত।
কিন্তু চিন্তা করে দেখো, মহাকাশের দিক থেকে যোগাযোগ মডিউলটির দিকে দৃষ্টি ফিরালো লিও। আমি শুধু সিন্ড্রা মিশনে ছিলাম, জিমেরও প্রথম মিশন ছিল সেটা। ইরারও তেমন অবিজ্ঞতা নেই। শুধু কিরু২ আর জেনারই মোটামুটি অবিজ্ঞতা আছে বড় মিশনে যাবাব মতো। ব্যপারটা কি অদ্ভূত নয়?
আপনার যুক্তি বুঝতে পারছি মহামান্য লিও। অযথা চিন্তা করবেন না। বিজ্ঞান পরিষদ যেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি না…
যদি না কি? উপরের দিকে তাকাল লিও। থামলে কেন?
মাফ করবেন মহামান্য। এটা বলার ক্লেয়ারিফিকেশান নেই আমার। চতুর্থ ধারার দ্বিতীয় মাত্রার অপরাধ।
চিন্তিত ভঙ্গিতে চিবুকে হাত বুলালো লিও। চতুর্থ মাত্রার যে কোন অপরাধই বিনা বিচারে যাবতজীবন নির্বাসনের সমতূল্য। আর দ্বিতীয় মাত্রার হলে তো আরো অনেক কঠিন ব্যপার।
ট্রিনিটি আমি এই অভিযানের দলপতি। আমার কাছে থেকে লুকাবে তুমি?
আমি সত্যিই দুঃখিত লিও। এক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই।
দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে আবার মহাকাশের দিকে ফিরল লিও। দূরে দেখা যাচ্ছে স্কাউট শীপগুলো। তাদের ডানার নিচের সতর্কতামুলক লাল রঙের লাইটগুলো জ্বলছে নিভছে। যে কোন সময় পর্যাপ্ত ডেটা সংগ্রহ করে চলে আসবে স্কাউটশীপ গুলো। দূরের প্রান্তরে বিশাল ডালাকৃতির স্পেসস্টেশনটার দিকে চোখ আটকে গেল তার। সিলিন্ডার আকৃতির স্পেসস্টেশনটার মাঝখানে চোখের মত গর্তটি আর্টিফিশিয়াল গ্রেভিটির জন্যে নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে। দেখে লিওর মনে হলো তার দিকে চোখটি তাকিয়ে আছে। বাটন টিপে গ্লাস উইন্ডোটা অন্ধকার করে দিল লিও।